বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৮ পূর্বাহ্ন
আগৈলঝাড়া (বরিশাল), কালের খবর : বরিশালের আগৈলঝাড়ায় জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিজেরাই চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রায় এক যুগ ধরে বসবাস করছেন পরিত্যক্ত আবাসিক ভবনে। গত এক যুগ ধরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অগণিত আবেদন-নিবেদন আর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চিঠি চালাচালির মধ্যে সময় কাটলেও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ওসি (তদন্ত)সহ পুলিশ কর্মকর্তাদের বসবাসের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতর নতুন আবাসিক ভবন নির্মাণের বরাদ্দ প্রদান করেনি। নিয়মনীতির অক্টোপাশে বাধ্য হয়ে থানা চত্বরের অবস্থিত জরাজীর্ণ, পরিত্যক্ত তিন তলা ভবনের স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের কারণে আবাসিক ভবনের বসবাসরত শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকমের ভাইরাসজনিত অসুখ-বিসুখে। একই অবস্থা থানার প্রশাসনিক মূল ভবন ও পুলিশ ব্যারাকেরও। জেলা পুলিশের কল্যাণ সভায় প্রতি মাসেই আবাসিক ভবন ও পুলিশ সদস্যদের জন্য ব্যারাক হাউস নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা হলেও প্রায় এক যুগ ধরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শুধু আশার বাণীই শুনিয়ে যাচ্ছেন, কাজের অগ্রগতি কিছুই হয়নি। থানার একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, থানার প্রশাসনিক মূল ভবনের মধ্যে অস্ত্রাগার কক্ষে ছাদের প্লাস্টার ধসে পড়ছে, বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে কক্ষে। মালখানায় পানি পড়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম বিচারাধীন মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত। থানার উপরে ব্যারাকে থাকা পুলিশ সদস্যদের রান্নাঘরটি অনেক আগে থেকেই পরিত্যক্ত। থানায় ১ জন ওসি, ৭ জন এসআই, ৮ জন এএসআই, ২৪ জন ফোর্সসহ মোট ৪১ জন কর্মরত থাকলেও থানায় অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৩৮ জন। অফিসার ও পুলিশ সদস্যরা সারা দিন ডিউটি শেষে রাতে ঘুমাতে গেলে বিছানায় বৃষ্টির পানি গায়ে পরে আঁতকে ওঠেন। ঝড়-বৃষ্টির সময় নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় তাদের। ঘুমন্ত পুলিশের উপর ভবনের ছাদ ও দেয়ালের প্লাস্টার ধসে গায়ে পরে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে প্রায়ই। কনডেম সেলের মতো পুলিশ ব্যারাকে স্থান না পাওয়া পুলিশ সদস্যদের ব্যারাকের বারান্দায় পলিথিন টাঙিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে। এর কোনো কিছু থেকেই বাদ পরছেন না পরিত্যক্ত আবাসিক ভবনে বসবাস করা ওসিসহ অন্য পরিবারগুলোর সদস্যরাও। অথচ পুলিশ ইন্সপেক্টর, পুলিশ ইন্সপেক্টর (তদন্ত) ও সাব-ইন্সপেক্টরদের জন্য পৃথক আবাসিক সুবিধা ও পুলিশ সদস্যদের পৃথক ব্যারাক হাউস নির্মাণের বিধান থাকলেও থানা স্থাপনের ৩৪ বছরেও আগৈলঝাড়ায় তা বাস্তবায়ন হয়নি। পুলিশের জন্য নির্মিত পরিত্যক্ত আবাসিক ভবন এখন যে কোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলেও জানায় ওই সূত্র। কারণ ২০০৭ সালে সিডর পরবর্তী সময়ে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ থেকে থানা পুলিশের একমাত্র আবাসিক ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরিত্যক্ত আবাসিক ভবনের ঝুঁকিপূর্ণ সিলিং ও দেয়াল খসে পড়ে মাঝে মধ্যেই আহত হচ্ছেন পুলিশ পরিবারের সদস্যরা। ফলে অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন থানা চত্বরের বাইরে বাসা ভাড়া করে থাকতে। পরিবার সদস্যদের নিয়ে আবাসিক ভবনে প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কের মধ্যে কাটাতে হয় পুলিশ পরিবারের সদস্যদের। তারপরেও আবাসিক ভবনে ঠাঁই না মেলা অফিসারদের বাধ্য হয়ে থাকতে হয় পুলিশ ব্যারাকে নির্মিত কনডেম সেলের মতো ছোট ছোট কক্ষে। ১১ বছর আগে পরিত্যক্ত আবাসিক ভবনেই বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের। পানি পড়ে আবাসিক ভবনের অবস্থা এতই খারাপ হয়েছে যে, স্যাঁতসেঁতে ভবনটি যে কোনো সময় ধসে পড়বে। ১৯৮৪ সালে থানার প্রশাসনিক ভবন ও অফিসারদের জন্য একটি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ওসির (তদন্ত) জন্য আলাদা আবাসিক ভবন নির্মাণের নিয়ম থাকলেও ৩৪ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। থানা চত্বরে নির্মিত আবাসিক ভবনে ছয়টি পরিবার বসবাসের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে নির্মাণের ফলে অচিরেই ভবনটি জীর্ণ হয়ে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। ভবন নির্মাণের সময় সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল বিভাগ থেকে থানার প্রশাসনিক ভবনে বাথরুমের কোনো নকশাই করা হয়নি। কিভাবে দেশে বাথরুমবিহীন সব থানার প্রশাসনিক ভবনের এই নকশা অনুমোদন হয়েছে তার কোনো উত্তর মেলেনি কোথাও। ফলে ব্যারাকে থাকা পুলিশ সদস্যদের বাথরুম সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। থানা পুলিশ নিজস্ব উদ্যোগে বাথরুমের ব্যবস্থা করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা নগণ্য। প্রশাসনিক ভবন নির্মানের পর দু-একবার সংস্কার হয়েছে মাত্র। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক মোল্লা পুলিশের আবাসিক সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, জুলাই মাসের কল্যাণ সভায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশাসনিক ভবন সংস্কার, আবাসিক ভবন নির্মাণ ও পুলিশ সদস্যদের জন্য পৃথক ব্যারাক হাউস নির্মাণের দাবি জানানো হয়েছে। : :